ডেস্ক নিউজ : পণ্য আমদানির জন্য আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) হার ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ঋণাত্মক হয়ে আছে রফতানির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে ফিরে আসছেন। সাথে নিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিনের জমানো বৈদেশিক মুদ্রা; কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতিটি ব্যাংকের কাছেই উদ্বৃত্ত ডলার জমা রয়েছে। বাজারে বিক্রি করতে না পারায় ব্যাংকগুলো ডলার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। ডলারের মূল্য পতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নগদ টাকায় ডলার কিনছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সমৃদ্ধ হচ্ছে; কিন্তু বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকা ছাড়ায় মুদ্রাসরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার কিনেছে। এর বিপরীতে বাজারে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ভোগব্যয় কমে গেছে। এতে রফতানি আয় কমে গেছে। বিশেষ করে তৈরী পোশাক রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যয় কাঁচামাল আমদানিতে; কিন্তু পোশাক রফতানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক আমদানিও কমে গেছে। দীর্ঘ দিন যাবৎই মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এর সাথে করোনার প্রভাবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমদানি ব্যয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, গত অক্টোবরে পোশাক রফতানির বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি কমেছে ১৪ শতাংশ। আর গত জুলাই- সেপ্টেম্বরে আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। সামগ্রিক আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও কমে গেছে।
এ দিকে কাজ হারিয়ে প্রতিনিয়তই বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা ফিরে আসছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রমিক ফিরে আসার হার সবচেয়ে বেশি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান মতে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ২৮টি দেশ থেকে শ্রমিক ফিরে এসেছেন প্রায় পৌনে তিন লাখ । এসব শ্রমিকের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘ দিন যাবৎ বিদেশে কর্মরত ছিলেন। কর্মহীন হওয়ায় তারা টিকতে না পেরে দীর্ঘ দিনের জমানো সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। এতে বেড়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্স-প্রবাহ; কিন্তু আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় এসব বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকগুলো কাজে লাগাতে পারছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত কোটার বিপরীতে বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে ধরেও রাখতে পারবে না। এ কারণে বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের মূল্যপতন ঠেকাতে বাজার থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে। বিপরীতে নগদ টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের ১১ নভেম্বরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল তিন হাজার ১৬২ কোটি ডলার, চলতি মাসের ১১২ নভেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি ডলার। তবে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়লেও বাজারে নগদ টাকা ছাড়ায় টাকার প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি আরো উসকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে, সে যা-ই হোক, এ সময়ে বড় আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশী ও রফতানিকারকরা। এ দুর্দিনে ডলারের বাড়তি মূল্য পাচ্ছেন। এতে এক দিকে বৈধ পথে যেমন রেমিট্যান্স-প্রবাহ বেড়ে গেছে, সেই সাথে রফতানিকারকরা প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করছেন; কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না কিনলে ডলারের মূল্য আরো পড়ে যেত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন প্রবাসী বাংলাদেশী ও রফতানিকারকরা।